মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মুহিত জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। তার ধারণা, ‘চুক্তি হলেও মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না। প্রত্যাবাসন তখনই সম্ভব হবে, যখন রাখাইন রাজ্য থেকে মগদের বিতাড়িত করা যাবে।’ মিয়ানমার সরকারকে ‘শয়তান’ বলে মন্তব্য করেন মুহিত।
রোহিঙ্গাদের জন্য আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে আলাদা বরাদ্দ থাকবে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে বরাদ্দ কত রাখা হবে, সে বিষয়ে কিছু না বললেও টাকার অংকটা বেশ বড় হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৬ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে ব্রিটিশ এমপি মি. স্টিফেন টুইগের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন মুহিত।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, প্রতিনিধি দলটির মিয়ানমারে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের ভিসা দেওয়া হয়নি। পরে এ দলের সদস্যরা বাংলাদেশে আসেন। ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন তারা। আলোচনায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান তারা।
‘আমি বলেছি, ১০ লাখ রোহিঙ্গার চাপ বহন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য সহায়তা লাগবে।’, যোগ করেন মুহিত।
মন্ত্রী আরও জানান, আগে থেকেই এ দেশে অনেক রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের পুনর্বাসন করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। এ জন্য ভাসানচরে অবকাঠামো তৈরি করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কাজে অর্থ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
যারা আগে থেকেই এ দেশে বসবাস করে আসছে, তাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে বলে জানান মুহিত।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুহিত আরও জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের প্রশংসা করে ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল। এ সময় রোহিঙ্গাদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা।
রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে ব্রিটিশ এমপিরা কী জানতে চেয়েছেন—প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছে আবেদন করা হয়েছে। অনেকেই এগিয়ে এসেছেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন সহায়তা করছে না। তবে ভারত এখন সহায়তার হাত বাড়িয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রচুর ত্রাণ দরকার। এ জন্য বাড়তি অর্থ প্রয়োজন। অনেক দেশ সহায়তা দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। ফলে আমাদের নিজেদের অর্থ খরচ করতে হবে।
বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্য এ পর্যন্ত কত টাকা দিয়েছে জানতে চাইলে মুহিত বলেন, ‘জানা নেই। তবে শিগগিরই সঠিক হিসাব করা হবে। কারণ বিদেশি সহায়তা কত পাওয়া গেছে তার পরিমাণ সম্পর্কে জানার পর সে অনুযায়ী বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে।’
রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় চাপ—এ কথা স্বীকার করে মুহিত বলেন, ‘এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি।’
পাঠকের মতামত